you're reading...
Random Thoughts

আমার পূর্নতার এক বছর – ভালোবাসার অন্য নাম নির্ভেদ

বাবা, পৃথিবীর আলো-বাতাসের প্রতি তোমার দায়ব্ধতার এক বছর পূর্তি হলো আজ। অসীমের শূন্য গহব্বর থেকে জীবনবিন্দুকে কেন্দ্রিভূত করে তোমার এই পথচলাতে তুমি এখনও উদাসীন। একটু একটু করে তোমার ক্ষেত্র বড় হচ্ছে আর আমি এবং আমরা সেই বেড়ে উঠাতে প্রতিনিয়ত খুঁজছি আমাদের প্রশান্তি। তুমি কাঁদলে যেমন আতংকিত হই, তুমি না কাঁদলেও ভাবি “কাঁদছ না কেনো?” তুমি হাসলে পৃথিবীকে নতুন করে আবিষ্কার করি আবার তোমার হাসিতে তোমার অসুস্থাতার উৎস খুঁজি!  তুমি যখন “বাব-বাব” বলো তখন নিজের কানকে আল্লাহ্‌র সবচেয়ে বড় নিয়ামক মনে হয়। আস্তে আস্তে করে জীবনের সাথে তোমার পরিচয় হচ্ছে, বিন্দু বিন্দু আনন্দের উপলক্ষ্য তোমাকে নিয়ে সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে। সেই সম্ভাবনার সমষ্টিই তোমাকে তৈরি করবে একটি দীর্ঘ যাত্রার…।

বাবা, জানো তোমার বয়স সবাই বলে এক বছর। আমি তা মানতে নারাজ – দেখো প্রথম লাইনে আমি লিখেছি “আলো-বাতাসের প্রতি তোমার দায়ব্ধতার এক বছর পূর্তি”, কারন আমার মননে, আমার সত্তায় তোমার অস্তিত্ব আরো আগে থেকে। ২১ মাস আগে যেদিন ডাক্তারি পরীক্ষায় তোমার অস্তিত্বের নিশ্চয়তা জানতে পারলাম, সেদিনের মুগ্ধতা আর অনুভূতির ব্যাখ্যা অসম্ভব রকমের অতিপ্রাকৃত! সেই অসংগায়িত অনুভূতির প্রকাশে শব্দ-অশব্দের নীরব কোলাহল একটি দীর্ঘ লেখার প্রেক্ষিত তৈরি করে দিতে সক্ষম। তখনও তুমি পুরোপুরি জীবন হয়ে উঠোনি, তুমি অনেকগুলো জীবনকোষের সমষ্টি। প্রতিদিন-প্রতিমুহুর্তে একটু একটু করে তোমার ছবি আঁকা, তোমাকে নিয়ে শব্দের আবরণে মৌনতার ছবি আঁকা। তুমি কেমন হবে, কেমন হবে তোমাকে স্পর্শের শীতলতা, কেমন হবে তোমার চাহনির তীক্ষ্ণতা ইত্যাদি। আমি কোলাহলের আড়াল হলে তোমাকে নিয়ে ভাবতাম, তোমার জীবনের স্পন্দনের অপেক্ষায় স্বপ্ন সাজাতাম…। বাবা জানো এরমধ্যে একদিন অনেক কষ্ট করে তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছি, বলে রাখি এর আগে কোন কবিতা লিখতে আমার এতো সময় লাগেনি। যাই লিখি কেনো যেনো মনে হয়, শব্দগুলো বড় বেশী ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। বারবার মনে হয়, তোমাকে নিয়ে লিখা কবিতা গভীরে গভীরতা হারিয়ে গেলে তবেই তা তোমাকে সমর্পনের যোগ্যতা রাখে। যাই হোক, অনেক ভেবে সেইদিন তোমার জন্য নীচের কয়েকটি লাইন লিখতে পেরেছিলামঃ

“আমি বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা রুক্ষতা,
তুমি নিমগ্ন প্রার্থনা, জল-কালিতে আঁকা স্রষ্টার কোমলতা,
আমি বিশ্বাস হারানো ভ্রান্তিতে শান্তি খোঁজা পথহারা,
তুমি শীতল পাটিতে সাজিয়ে রাখা সৃষ্টির লুকানো মমতা।

আমি আকুতি, তুমি নিয়তি,
তুমি বিশালতা, আমি জড়তা,
আমি আকাংখা, তুমি বিলাসিতা,
নতুন প্রানের সঞ্চারে তুমি জল, তুমি মাটি
আ জল আর মাটিতে নতুন জীবনের উৎস খুঁজি!”

ধীরে ধীরে তোমার অস্তিত্ব দৃশ্যমান হতে থাকে আমার কাছে। আর আমি নিজেকে আবিষ্কার করি এক অদ্ভুত জগতের মাঝে, আমার চিন্তা আর বিশ্বাসে আবিষ্কার করি এক অচেনা আমিকে। নিজেকে পিতা হিসেবে দেখতে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার মাঝেই শুরু হয় আমার এক অবরুদ্ধ পথে যাত্রা। বাবা, জানো তোমার সেই অস্তিত্বের উম্মাদনা আমাকে কেমন যেনো ভীত করে তুলেছে। তুমি আসছ তাই প্রার্থনা আর নিমগ্নতাতে কেমন যেনো আশঙ্কার থাবা। নিজের প্রতিটি কাজে যেমন রাস্তা পার হওয়া, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা – সবকিছুতে কেমন যেনো একটা ভয়, একটা দীনতা! শুধু ভাবি, আমার কোন কাজের প্রভাব যদি তোমার বিপদের কারন হয়ে দাড়ায়? যে প্রানের সঞ্চারে প্রতিমুহুর্তে আমার আমিতে প্রাঞ্চলতা, সে প্রানের প্রান্তিক প্রাচীরে অপ্রত্যাশিত সময়ের আঁচর আমাকে গুঁটিয়ে যাওয়া শামুকের মত করে দেয়। তবুও এই গুঁটিয়ে যাওয়া আমাকে আনন্দ দেয়, এই গুঁটিয়ে যাওয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকা অহংকার মাথা উঁচু করে। এই অহংকার পিতৃত্বের, এই অহংকার দায়িত্বের, এই অহংকার সন্তানকে স্পর্শের!

বাবা প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি, তোমাকে স্পর্শ করি, সেদিন কেমন লেগেছিলো তোমাকে বুঝানো সম্ভব না। সেই অনুভূতির মায়াজাল তুমি সেদিন বুঝতে পারবে যেদিন তুমি আমার মত এক সন্তানের পিতা হবে। সেই স্পর্শের অনুভূতিতে মিশে ছিলো ভালোবাসা, পূর্নতা আর কিছু ভয়! ভয় এই অশুভ সময়ে  তোমার প্রত্যাবর্তনের কারন হয়ে। ওহ জানো এই প্রেক্ষাপটে আমার একটি কবিতা আছে, কবিতাটি তোমার জন্মের অনেক অনেক আগের – যখন তোমাকে নিমন্ত্রণের কোন আয়োজনই ছিলোনা। কেনো যেন লিখেছিলাম জানিনা, তবে খুব মিলে গেছে তোমাকে নিয়ে আমার ভাবনার সাথে।

“আমাদের কবিতা, ছবি, নকশা স্বপ্ন দেখে
নতুন এক ভোরের… স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা তাই,
কণ্ঠচীরে বাবা-মার আরাধনা-
তন্দ্রাচ্ছন্ন সময় ও জীবন জয়ে আর একটা
পৃথীবি, আকাশ দাও…
নতুন ভোরটাতে সেখানেই নিয়ে যাও,
আমাদের অথবা সুধু তাকে,
… বিশুদ্ধ নিংশ্বাসের নিশ্চয়তায়।”

এইসব ভয় আর স্নপ্ন কেনো জানো? ওইযে, ভীষণভাবে মধ্যবিত্ত তাই। মধ্যবিত্তরা এমনই হয়। মধ্যবিত্তদের কাছে জীবন একটা রণক্ষেত্র আর বেঁচে থাকাটা একটি যুদ্ধ। যুদ্ধ বলেই সবকিছুতে আমাদের হারাবার ভয়, সবকিছুতে পাওয়া-না পাওয়ার অংক! তবে পিতা হিসেবে, আমি তোমাকে কঠিন জীবন দর্শনের কথা বলব না। জীবন কোন যুদ্ধ না বাবা যা তোমার জিততে হবে, জীবন একটা ভ্রমণ ছাড়া আর কিছুনা। জীবনকে যাপন করার অনেক রাস্তা পাবে, কোন রাস্তাটা ধরে হাঁটবে আমার কাছে তোমার প্রথামিক শিক্ষা তাই। অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে, তাইনা? বাদ দাও অন্য কথায় আসি।

Nirved

বাবা জানো, গত এক বছরে তোমাকে দেখে প্রশান্তির অনেকগুলো মুহুর্ত আছে। তবে এখন যে সময়ের কথা মনে পড়ছে সেটা গত রোজার ঈদের। আমি যেদিন ঢাকা থেমে মৌলভীবাজারে যাই, সেদিন রাস্তায় আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। একটা সময় আমার, সায়দাবাদ থেকে বাসায় ফেরত আসতে ইচ্ছে করেছিলো কিন্তু যতবারই তোমার কথা মনে পড়েছে নিজের মধ্যে অদ্ভুত এক শক্তি কাজ করেছে। আর রাত ২ টার পর যখন বাসায় ঢুকার কিছুক্ষন পর ৫ মাস বয়সের ছেলে ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখে হেসেছিলে, সেদিন সর্গকে আমি পৃথিবীতে দেখেছি। তুমি সেই পূর্নতা, তুমি সেই মুগ্ধতা! একদিন বাড়ি থেকে ঢাকা আসার পর তোমাকে ভীষণ রকমভাবে মনে পড়ছিলো। বারবার মোবাইলে তোমার ছবি দেখছিলাম আর নিজেকে খুব শূন্য মনে হচ্ছিলো। অনেকক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করে তোমাকে নিয়ে ছোট্ট করে কয়েকটা লাইন লিখেছিলাম, শুনবা…

“গল্পের গহীনে গল্পরা গতিহারা
শব্দের বুনটে গদ্য-পদ্যে ছন্দরা ছন্নছাড়া
স্পর্শের মুগ্ধতায় দহনে বরফ শীতলতা
ভাসতে ভাসতে ভংগুর আগামীতে নির্মানের নেশা
আমি আর আমার সবকিছুতে আজ তোমার তাড়না!”

তোমার প্রতিটি প্রথম আমার কাছে এক একটি কবিতা – যে কবিতা কখনও লিখা হবে না, কাউকে বলা হবেনা। পৃথিবীর সব পিতার মত আমিও চাই তুমি বড় হও, অনেক বড়। সফলতার বড় নয়, জীবন যাপনে তৃপ্তির বড় হওয়া, ব্যার্থ না হওয়ার বড় নয়, ব্যার্থতার কাছে পরাজিত না হওয়ার বড়। কারন জীবন ধারাবাহিক। অন্ধকারটা অলীক ক্ষণস্থায়ী, আলোটাই চিরন্তন, আলোই সত্য। তুমি আলোর পথের যাত্রী হও, তুমি আলোর দিশারী হও – এই প্রার্থনায় তোমার “বাব-বাব-বাবা।”

Unknown's avatar

About Md. Moulude Hossain

FinTech | Digital Payment | Product Strategy | Product Management | EMV | Business Development

Discussion

2 thoughts on “আমার পূর্নতার এক বছর – ভালোবাসার অন্য নাম নির্ভেদ

  1. Emdadul Raihan Sonet's avatar

    অনুভূতির জলছাপ। আপনার ছেলের জন্য ভালোবাসা।

    Posted by Emdadul Raihan Sonet | November 28, 2018, 10:53 am

Trackbacks/Pingbacks

  1. Pingback: পৃথিবীর চাতুর্য এবং শব্দ ডানার উপাখ্যান: একটি নির্ভেদীয় উম্মাদনা | iammoulude - December 12, 2020

Leave a comment

upay-GP Offers

Blog Stats

  • 118,142 hits

Archives

upay bonus

Recent Post