সম্পতি নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে অস্ট্রেলিয়ান এক নাগরিকের সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যে যে মিথ কাজ করেছে তা হচ্ছে হোয়াইট জেনোসাইড। এই উগ্র শ্বেতাঙ্গ মতাদর্শের অনুসারীদের এক হিংস্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে “হোয়াইট সুপ্রিমেসী” বা “শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য”। আর এই লক্ষ্য অর্জনে তারা যেকোন ধরণের জাতিগত হত্যাযজ্ঞ এবং নৃশংসকে বৈধ মনে করে। নিউজিল্যান্ডে আক্রমণের আগে সেই সন্ত্রাসী প্রকাশ করেছে ৭৩ পৃষ্ঠার এক ম্যানিফেস্টো যেখানে সে তার এই নরকীয় হামলার বৈধতা, তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এই ম্যানিফেস্টো নিয়ে একটু পরে বলছি, তার আগে “হোয়াইট জেনোসাইড” এবং “হোয়াইট সুপ্রিমেসী” নিয়ে কিছু কথা।
হোয়াইট জেনোসাইড
হোয়াইট জেনোসাইড মতাদর্শের অনুসারীদের মতে, আগামী ২০-৫০ বছরের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ নিয়ন্ত্রিত দেশ যেমন আমেরিকা, কানাড্ অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপে মুসলিম জনসংখ্যা ১০ গুন বেড়ে যাবে। এইসব দেশগুলোতে মুসলমানদের বহিরাগত শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে এদের সাথে হাজার বছর ধরে ‘হোলি ওয়ার’ এর বিশ্বাসে তারা বদ্ধপরিকর। এইসব দেশে মুসলমানদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার কারনে শ্বেতাঙ্গরা চাকরী থেকে শুরু নিজেদের সংস্কৃতি নিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা বিশ্বাস করে যে মুসলমানদের এই অভিভাসন চলতে থাকলে ২০-৩০ বছরের মধ্যে এই দেশগুলোতে হোয়াইট রেস মাইনোরিটিতে পরিণত হবে। আর এই মতাদর্শের ভিত্তি হচ্ছে কনসপিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মূল বক্তব্যই হলো শ্বেতাঙ্গরা ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাদের তুলনায় নিকৃষ্ট এবং বিপদজনক জাতি ও সংস্কৃতির দাপটে।
বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ সাম্প্রতিককালে অনলাইনে দ্রুত প্রসার লাভ করছে এবং এই তত্ত্বে বিশ্বাসীদের একটি ব্যাপক আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীও তৈরি হচ্ছে। মুসলিমদের নিয়ে ঘৃণা এবং ভীতি ছড়ানোর পাশাপাশি বিশ্ব পুঁজিবাদের বিরুদ্ধেও আলোচনা উঠে এসেছে এই তত্ত্বে। পশ্চিমা দুনিয়ায় অভিবাসীদের আসার হার বেড়ে যাওয়ার পিছনে বিশ্ব পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখতে বড় বড় রাষ্ট্র এবং কর্পোরেশনগুলোর ‘হোয়াইট জেনোসাইড’ বা ‘শ্বেতা্ঙ্গ গণহত্যায়’ উৎসাহ যোগানোর নীতিকে দায়ী বলা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে হামলাকারীর প্রকাশিত ইশতেহারে এর পাশাপাশি এন্টি সেমিটিক (ইহুদী বিদ্বেষী) এবং নব্য নাৎসীবাদীস্তার কিছু কথাবার্তা পাওয়া গেছে।
হোয়াইট সুপ্রিমেসী
হোয়াইট জেনোসাইডের কারনে হোয়াইট রেসকে মাইনোরিটিতে পরিণত হওয়া থেকে বাঁচাতে হোয়াইট মেজরিটি দেশে ক্রমবর্ধমান ‘মুসলিম জনশক্তি বৃদ্ধির’ বিরুদ্ধে সংগ্রামই হচ্ছে “হোয়াইট সুপ্রিমেসী” বা “শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য”। আর এই সংগ্রাম কোন রাষ্ট্রীয় নীতিগত পরিবর্তনের সংগ্রাম নয় এটা সশস্ত্র সংগ্রাম। এই সংগ্রামের একমাত্র লক্ষ্য হলো যে কোন মূল্যে বাদামী চামড়ার বহিরাগতদের উৎখাত করা। এই সংগ্রামে সুস্পষ্টভাবে কোন ধরনের মানবতা্র কোন স্থান নেই।
এই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডে দুইটি মসজিদে হামলাই প্রথম নয়। এর আগেও ঠিক একইভাবে বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র হামলা হয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত উল্লেখ নিচে।
১। ২০১৭ সালে কানাডায় এক মসজিদে হামলা চালিয়ে ৬ জনকে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী আলেসান্দ্রো। গত ফেব্রুয়ারিতে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়।
২। উগ্র ডানপন্থি লুকা ত্রাইনি ২০১৮ সালে মাসেরাতা শহরে আফ্রিকা থেকে আসা ছয় অভিবাসীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন। তার ঘরেও পাওয়া গিয়েছিল উগ্র জাতীয়তাবাদীদের আদিগুরু হিটলারের লেখা মেইন ক্যাম্ফ।
৩। সাবেক বসনীয় সার্ব নেতা রাদোভান কারাদজিচ গত শতকের নব্বই দশকে বসনীয় যুদ্ধে আট হাজার মুসলমান পুরুষ ও বালককে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হন। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে কারাদজিচকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেন।
৪। অ্যান্তন লুন্ডিন পিটারসন, সুইডেনে দুই অভিবাসী শিশুকে হত্যা করেছিলেন এই শিক্ষার্থী।
৫। ভেনেতিয়ান সামরিক কর্মকর্তা অ্যান্তনিও ব্রেগাডিন একটি চুক্তি ভেঙে তুর্কি বন্দীদের হত্যা করেছিলেন।
নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে হামলাকারী যে এই উগ্র শ্বেতাঙ্গ মতাদর্শের অনুসারী সেটা তার প্রকাশিত ম্যানিফেস্টোতেই সুস্পষ্ট। এছাড়াও হামলার পর হাতকড়া পড়া অবস্থায় তার একটি ছবিতে সে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের প্রতীকী প্রকাশ পেয়েছে। ছবিতে দেখা গেছে হামলাকারী তার বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি আঙুল বৃত্তাকারে একসঙ্গে যুক্ত হাস্যজ্জল ছবি তুলেছে। এখানে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি আঙুল বৃত্তাকারে একসঙ্গে যুক্ত করলে সেটা ‘পি’ আকৃতির হয়, যা ‘পাওয়ার’বা ‘শক্তি’ বোঝায়। আর বাকি তিন আঙুল ‘ডব্লিউ’ আকৃতির হয়, যার মাধ্যমে হোয়াইট বা সাদা বোঝানো হয়।

নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে হামলাকারী আদালতে উপস্থিতির সময় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের প্রতীক দেখাচ্ছে
এবার আসি নিউজিল্যান্ডে হামলাকারী সেই সন্ত্রাসীর প্রকাশিত ম্যানিফ্যাস্টো বিষয়ে। উল্লেখিত ম্যানিফেস্টোতে সুস্পষ্টভাবে নিজেকে সে একজন রেসিস্ট আর ফ্যাসিস্ট দাবী করেছে। তার ৭৩ পৃষ্ঠার সেই ম্যানিফ্যাস্টোর শিরোনাম হলো “দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট”। ম্যানিফ্যাস্টোটি অনেকটা গতানুগতিক FAQ এর মতো করে লেখা, যেখানে এই হামলার সাথে সম্পৃক্ত সম্ভাব্য সব প্রশ্ন এবং উত্তর দেয়া আছে। ম্যানিফ্যাস্টোতে সে নিজেকে একজন সাধারন শ্বেতাঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে বলে, আমার দেশ আমার মাটি কখনই অভিবাসীদের হবে না নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করা একজন সাধারন শ্বেতাঙ্গ আমি। আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর নীচে দেয়া বিস্তাতির দেয়া হলো।
প্রশ্নঃ এই হামলা আপনি কেনো করেছেন?
উত্তরঃ অভিবাসীদের এটা বোঝাতে যে, আমার মাতৃভূমি আমারই থাকবে। যতদিন পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গরা বেঁচে থাকবে এই মাটি তাদেরকে দখল করতে দেয়া হবে না।
প্রশ্নঃ আপনি কি চান?
উত্তরঃ আমাদের মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এবং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।
প্রশ্নঃ আপনি কাকে প্রতিনিধিত্ব করেন?
উত্তরঃ কোটি কোটি শ্বেতাঙ্গকে যারা নিজেদের দেশে, নিজের মানুষদের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে চায়।
প্রশ্নঃ আপনি কি কোন গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন?
উত্তরঃ আমি সরাসরি কোন দল বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত নই, যদিও বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে থাকি।
প্রশ্নঃ আপনি কি এটাকে সন্ত্রাসী হামলা মনে করেন?
উত্তরঃ সাধারণভাবে হ্যা। কিন্তু আমি মনে করি এটা একটি দেশাত্মবোধক কাজ।
প্রশ্নঃ আপনি কি মুসলিম ঘৃণা করেন?
উত্তরঃ মুসলিম যারা নিজের দেশে থাকে তাদেরকে ঘৃণা করি না। মুসলিম যারা আমার দেশে থাকে তাদের আমি অপছন্দ করি। মুসলিম যারা নিজের সংস্কৃতি, সভ্যতা ভূলে নিজেদের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমি তাদের ঘৃণা করি।
প্রশ্নঃ আপনি কি বিদেশী বা অন্য সংস্কৃতিকে ঘৃণা করেন?
উত্তরঃ না আমি জীবনে অনেক ট্র্যাভেল করেছি, আমি সেসব দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি। কিন্তু এরাই যখন আমার দেশে এসে আমার দেশের মানুষকে সরিয়ে দিতে চায়, তাদের মারতে চায় – মাই তাদের বিরুদ্ধে যোদ্ধ করতে চাই।
প্রশ্নঃ আপনি নিরীহ লোক কেন মারছেন?
উত্তরঃ যারা দখলকারী তাদের মধ্যে কোন নিরীহ লোক নাই। আমি যে কোন মূল্য ইমিগ্রেশন বিরোধী, চিপ লেবার আনার নামে ইমগ্রেশন বন্ধ করতেই হবে।
এছাড়া আরো অনেক ব্যাখ্যা দিয়ে সে এই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের লড়াইকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। যেকোন হামলার পিছনে হামলাকারীর উপর কোন না কোন একটা মতাদর্শের প্রচন্ড প্রভাব লক্ষণীয়। আরো লক্ষণীয় যে, মতাদর্শগুলো জাতি-ধর্ম-বর্ন ভেধে ভিন্ন হলেও এর প্রভাবটা অভিন্ন। উগ্র জাতীয়তাবাদী বা উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শ – কোনাটাই কখনও কল্যাণের পথ সৃষ্টি করতে পারেনি, জন্ম দিয়েছে ধ্বংস আর প্রতিশোধের নতুন উপলক্ষ্য। হয়তো এটাই চাই আমাদের, কারন পুঁজিবাদওতো আমাদের শিখিয়েছে শুধু অর্থ ক্ষমতার দৌরাত্ম্য। আর এই বৃত্ত্যের মধ্যে অজান্তেই ঘোরপাক খাচ্ছি আমরা সবাই – আমি, তুমি, আপনি, তারা, আপনারা – আমরা সবাই!
লেখকঃ হোসেন মৌলুদ তেজো
তথ্যসূত্রঃ
1. A history of recent attacks linked to white supremacy, The Guardian
2. Hate Rising: White Supremacy in America – CBS News
3. Hate Rising: White Supremacy in America – CBS News
4. Wikipedia
অব্যাহত হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট সন্ত্রাস হচ্ছে হান্টিংটন থিসিসের বাস্তব প্রয়োগ। তার তত্ত্বকে এরা ধারণ করে হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট কাঠামোর আওতায়। এর মূল ইঙ্গিত হলো- ইসলাম হচ্ছে পাশ্চাত্য সভ্যতার অত্যাসন্ন বিপদ, ঠিক স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে বিশ্বজুড়ে পাশ্চাত্যের স্বাধীনতার জন্য যেমন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছিল কমিউনিজম। এদের মতে, পাশ্চাত্যকে এখন শুধু নিজের সভ্যতাকেই বাঁচাতে হবে না, সেই সাথে প্রতিরোধ করতে হবে শত্রু-সভ্যতাকেও। আর এই ‘শত্রু-সভ্যতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামকে।
শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সতেরো শতকের বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ থেকে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠবাদিতার উৎপত্তি। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের আগে ও পরে সেখানে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠবাদীদের আধিপত্য ছিল। এর সাথে মধ্য আটলান্টিক দাস বাণিজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের জিম ক্র আইন ও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য নীতিও রয়েছে।
শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের ধারনা বহুকাল ধরে চলে আসছে। এর সাথে সম্পৃক্ত আছে অসংখ্য মানুষের রক্ত আর জীবনের গল্প। ইউরোপ শুধু শ্বেত ইউরোপীয়দের জন্য—এমন স্লোগান এরই মধ্যে না উঠলেও খুব বেশি দেরি নেই। শ্বেতাঙ্গ ইউরোপ-আমেরিকা বিশ্ব শাসন করবে, এমন স্লোগান সরাসরি না উঠলেও বাস্তব কার্যক্রমে তেমনটিই প্রতিফলিত হচ্ছে।
শ্বেতাঙ্গ-সন্ত্রাসের ইতিহাস দীর্ঘ। উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় বহিরাগত শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীরা স্থানীয় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যে শ্বেতাঙ্গ-সন্ত্রাস তৈরি করেছিল তাতে স্থানীয় জনস্রোত রক্তাক্ত হয়েছিল। শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের সেই বসতভূমি জবরদখল রক্তাক্ত আধিপত্যের এক অবিশ্বাস্য রক্তাক্ত ইতিহাস বা স্থানীয় আদিবাসীদের ক্রমে গভীর অরণ্যে ঠেলে দিয়েছে—ঝরনার জলে বিষ মিশিয়ে তাদের হত্যা করতেও মার্কিন বর্বরতার বিবেকে বাধেনি। সমঝোতা ও বহুত্ববাদের হিসাব তাদের মাথায় ছিল না। তদুপরি কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের ধরে এনে চরম নিষ্ঠুরতায় দাসপ্রথার প্রচলন মানবসভ্যতাবিরোধী এক কর্মকাণ্ড।
বর্তমান বিশ্বে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের সবচেয়ে বড় ব্রান্ড এম্বাসেডর খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্প। মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানকে নির্বাচনি প্রচারণার অস্ত্র করেছিলেন ট্রাম্প। তার এই মহান আমেরিকা দিয়ে তিনি সেই কলম্বাসের আবিষ্কৃত আমেরিকাকে বুঝিয়ে থাকেন; যা শ্বেতাঙ্গ আাধিপত্যেরই নামান্তর।
আপনার সাথে একমত। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের রাজনীতির বিপরীতে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে স্থাপন করেছেন ট্রাম্প। তাদের মধ্যকার বিভক্তিকে সামনে আনতে চেয়েছেন। মেক্সিকোর সীমান্ত নয় কেবল, মানুষের মনের মধ্যে থাকা বিভক্তির দেয়ালকে উসকে দিতে চেয়েছেন তিনি।
এই হোয়াইট সুপ্রীমেসির কারনেই গত কয়েকবছর ধরেই আমেরিকায় ফের বর্ণবিদ্বেষের বিষ মাথা চাড়া দিয়েছে। সম্প্রতি ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের আগে মার্চমাসে লুইসভিলে ব্রেওনা টেইলার, তার আগে আহমদ আরবেরি, একের পর এক কৃষ্ণাঙ্গকে বিনা কারণে হত্যা করেছে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। এই অবস্থায় দেশজোডা় বিক্ষোভের মধ্যে এই মামলার তদন্তের বারক নিয়েছে এফবিআই।
ঠিক বলেছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় ইউরোপজুড়ে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী মনোভাব এখন প্রবল রূপ নিয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা ও দল এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শ্বেতাঙ্গদের পক্ষে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। তাদের বলা হচ্ছে জনপ্রিয়তাবাদী (populist) সংরক্ষণবাদী (protectionist), উগ্র জাতীয়তাবাদী (extreme nationalist)।
একবিংশ শতাব্দীর সভ্য সমাজে বাস করেও আমরা বর্ণবাদী। আজও দেশে দেশে বর্ণবাদ বিরাজ করছে বিভিন্ন রূপে। গায়ের রঙ ছাড়িয়ে বিস্তার লাভ করেছে সাম্প্রদায়িকতায়। মানুষ বিভক্ত হয়ে শোষন করে চলেছে একে অন্যকে। বর্ণবাদের আদর্শ মনে লালন করে মিছিলে স্লোগান তুলে মানবতার। মিথ্যে আলোয়ানে চাপা দেয় বর্ণবাদের আগুন।