শাহরুখ খান – যার পরিচয় জানতে চাওয়া তার পরিচয়ের প্রতি সবচেয়ে বড় অবিচার! ভারতসহ এই উপমহাদেশেতো বটেই, উপমহাদেশের বাইরেও পরিচিত এই বলিউড সুপারস্টার। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তার ছবির বক্স-অফিস ব্যার্থতা তার স্টারডামকে বড় একটা ধাক্কা দিয়েছে, শাহরুখ খান এখনও “বলিউড বাদশা”, “কিং খান”, “কিং অব বলিউড” ইত্যাদি নামে পরিচিত। ২০০৮ সালে Newsweek শাহরুখ খানকে বিশ্বের জন প্রভাবশালীদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুভি স্টার হিসেবে আখ্যায়িত করে। পরবর্তিতে Los Angeles Times এর Steven Zeitchik তার একটি প্রবন্ধে শাহরুখ খানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুভি স্টার হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “He is the biggest movie star you’ve never heard of. And perhaps the world’s biggest movie star, period”! বলিউডের সিনেমার ক্ষেত্রে শাহরুখ খান আলাদা একটা প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। একটা পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্টানে ভারতের জনপ্রিয় গায়ক সোনু নিগম তার উদ্যেশে বলেছিলেন, “You are the one who actually set the standard of stardom in Bollywood” – নির্ভেজাল সত্য। তার সমসাময়িক বা তার অনুজ যেকোন তারকার স্টারডাম বিচারের মাপকাটি এখনও শাহরুখ খান।
তবে আমার আজকের এই লেখা সুপারস্টার বা অভিনেতা শাহরুখ খানকে নিয়ে নয়। আজকের লেখার বিষয়বস্তু একজন বিজনেস ম্যাগনেট, বিনিয়োগকারী এবং প্রযোজক শাহরুখ খানকে নিয়ে। একদম শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করা একজন মানুষের আজকে ৫,১০০ কোটি রুপির মালিক হওয়া থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহনের প্রচেষ্টা। একজন অভিনেতা তার অভিনয়ের বাইরে কিভাবে বিচরণ করেন এবং কতটা সফলভাবে করছেন সেটা বোঝার একটা অভিপ্রায় এই লেখা। মূল লেখায় যাওয়ার আগে এক ঝলক দেখে নেই শাহরুখ খানের মোট সম্পত্তি এবং তার আয়ের কিছু উৎস –
একজন অভিনেতা পরিচয়ের পাশাপাশি তার বিচরণ অনেক দিকে। নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্টান, আইপিএল-এ ক্রিকেট টিম, দুবাই সহ বিভন্ন প্রোজেক্টে তার বিনিয়োগ তাকে বানিয়েছে অভিনেতার চেয়েও বড় কিছু – একজন ব্যবসায়ী। তার চলার পথের গল্প, তার প্রেরণাদায়ী বক্তৃতা, সাক্ষাত্কার, উক্তি এবং চলচ্চিত্র তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে, পথ চলার শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখার এবং সেটা বাস্তবায়নের সাহস যোগায়।
ব্যক্তিগতভাবে একজন সুপারস্টার বা অভিনেতা ইমেজের বাইরেও শাহরুখ খানকে আমি পছন্দ করি তার “সেন্স অব হিউমার” এবং জীবন, সফলতা, ব্যর্থতা নিয়ে তার চিন্তা এবং দর্শনের কারনে। বিভিন্ন সময়ে জীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তার বেশ কিছু উক্তি আমাকে মুগ্ধ করেছে বারংবার, যেমন “Don’t be a Philosopher before you get rich” বা “Success is a journey and not a destination” ইত্যাদি। একজন অভিনেতার বাইরেও ব্যবসায়িক মানসিকতা এবং দুরদর্শিতা বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কীভাবে একটি সফল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য তৈরি এবং পরিচালনা করা যায় যে কোনো ব্যক্তি তার কাছ বা তার জীবনকে বিশ্লেষণ করে শিখতে পারেন। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমার খুব পছন্দের একটি উক্তি দিয়ে এই লেখার ভূমিকা শেষ করতে চাই। একটা সাংবাদিক সম্মেলনে তাকে ঘীরে চলমান কোন একটা বিতর্কের প্রেক্ষিতে (খুব সম্ভবত শীবসেনা কর্তৃক কোন একটা শাহরুখ বিরোধী কার্যক্রমে) শাহরুখ খান বলেছিলে, “You can LOVE me, you can HATE me but you cannot IGNORE me” – ধ্রুব সত্য!
শাহরুখ খানকে একজ অভিনেতা হিসেবে আপনার পছন্দ না হলেও তার কাছ থেকে ব্যবসা উদ্যোগ সংক্রান্ত অনেক কিছু শিখতে পারেন আপনি। শাহরুখ খানের কাছ থেকে আপনি একজন উদ্যোক্তা হিসাবে শিখতে পারেন এমন কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকলো এখানে।
১। প্রথম চেষ্টা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়
১৯৯৯ সালে শাহরুখ খান বলিউডে তার অন্যতম প্রিয় সহকর্মী অভিনেত্রী জুহি চাওলা এবং পরিচালক আজিজ মির্জার সাথে প্রথম প্রযোজনা সংস্থা ড্রিমজ আনলিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্টার এক বছর পরে তার এই প্রযোজনা প্রতিষ্টান থেকে তিনি “ফির ভি দিল হে হিন্দুস্তানি” নামে একটি সিনেমা প্রযোজনা করেছিলেন, যেটা বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। তারপর ২০০১ সালে এই প্রযোজনা প্রতিষ্টান থেকে “অসোকা” নামে আরেকটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন, যেটাও বক্স-অফিসে ব্যর্থ হয়েছিল। পরবর্তিতে এই প্রযোজনা প্রতিষ্টানের অংশীদারদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে ২০০৩ সালে ড্রিমজ আনলিমিটেড থেকে সিনেমা নির্মান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং “রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট” দিয়ে শুরু হয় প্রযোজক শাহরুখ খানের অতুন অধ্যায়।
২। একজন ব্যবসায়ীকে হতে হবে দূরদর্শী
একজন ব্যবসায়ী হিসেবে শাহরুখ খানের চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনে বিভিন্ন সময়ে দুরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। ২০০৪ সালে তাঁর নতুন প্রযোজনা সংস্থা, রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট (আরসিই) এর যাত্রা শুরু করার পরে তিনি এইরকম একটা দুরদর্শীতা দেখিয়েছিলেন। ড্রিমজ আনলিমিটেডের ব্যর্থতা কাটিয়ে রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট থেকে “ওম শান্তি ওম”র মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন যা মুক্তির সময় সর্বাধিক উপার্জনকারী চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি ছিল। তবে রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য শাহরুখ খানের সবচেয়ে বড় উপহার ছিলো তার দুরদর্শীতা। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ভারতীয় সিনেমায় প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে ২০০৫ সালে তিনি প্রতিষ্টা করেন ভারতের সবচেয়ে আধুনিক ভিজ্যুয়াল এফেক্ট স্টুডিও রেড চিলিজ ভিএফএক্স। প্রতিষ্টার সময় ভারতীয় সিনেমায় ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের তেমন ব্যবহার না হলেও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে সেটা শাহরুখ খান ঠিকই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। পরবর্তিতে প্রত্যাশামতই রেড চিলিজ ভিএফএক্স রা.ওয়ান এবং ক্রিশ-৩ এর মত ভিএফএক্স তৈরী করেছে, যা বক্স-অফিসে সফলতার পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে ভারতীয় সিনেমাকে দিয়েছে মর্যাদার আসন।
৩। সবসময় নতুন কিছু শেখার আগ্রহ
জ্ঞান বিকাশের একমাত্র উপায় হলো আরও শেখা এবং শিখার একমাত্র উপায় হলো আরও পড়া। শাহরুখ খানের মধ্যে সবসময় নতুন কিছু শেখার একটা ক্ষুধা রয়েছে, বই থেকে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সর্বশেষতম সংবাদ সম্পর্কে অবহিত হওয়া তিনি সবই করেন। শুধু তাই নয়, তিনি রাজীব বাজাজ, কেভি কামথ এবং মুকেশ আম্বানির মতো কয়েকজন সফল উদ্যোক্তা, যাদের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাদের ব্যাপের অধ্যয়ন এবং ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।
২০০৭ সালে, ডিটিএইচ (ডিশ-টিভি) এর একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংং চলাকালে শাহরুখ খান ডিশ-টিভি ব্যবসায়ের বিস্তারিত বিষয় জানতে ডিটিএইচ’র সিওও সলিল কাপুরের সাথে আলোচনা করেছিলেন। পরবর্তিতে সলিল কাপুর তার একটি লেখায় বলেছিলেন, “ভোক্তার ব্যবহার এবং বাজারজাতকরণ বিষয়ে শাহরুখ খানের যে জ্ঞান আছে তাতে তিনি এই বিষয়ে আইআইএম–এ একটি লেকচার অনায়াসে দিতে পারেন।” তার প্রযোজনায় নির্মিত রা.ওয়ান সিনেমার সংবাদ সম্মেলনে ভিএফএক্স সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রযুক্তিগত প্রশ্নের উত্তরও তাকে সাবলীলভাবে দিতে দেখা গেছে।
৪। অর্থ নয় নিজের মানসিক সন্তুষ্টিই লক্ষ্য হওয়া উচিত
২০০৯ সালে শাহরুখ খান জুহি চাওলা এবং তার স্বামী জে মেহতার সাথে অংশ নিয়ে আইপিএল ক্রিকেট দল কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) এর মালিকানা কিনেছিলেন। যদিও আইপিএল ক্রিকেট দল কেনা একটি স্পষ্টভাবে লাভজনক বিনিয়োগ ছিল, তবে এই ক্রিকেট দল কেনার জন্য শাহরুখকে তাড়িত করেছিল খেলাধুলার প্রতি তাঁর ভালবাসা। এ প্রসঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে শাহরুখ বলেছিলেন, “আমি কোটি কোটি টাকা উপার্জনের জন্য আইপিএল দল কিনিনি… বিয়েতে নেচেও আমি এই অর্থ উপার্জন করতে পারি”। একই কারণে ২০১২ সালে তিনি আই লিগের একটি ইন্ডিয়ান ফুটবল ক্লাবের শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সিনেমায় ভিএফএক্স – এর ব্যবহার এবং এই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগও একই কারনে তিনি করে আসছেন। যদিও এই জাতীয় বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লাভের কথা স্বীকার করেন, তবুও শাহরুখ খান বিশ্বাস করেন যে “সংখ্যার দিক দিয়ে যদি আপনি আপনার কোনও ব্যবসায় জয়ের ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন তাহলে আপনি নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখছেন”।
৫। ঝুঁকি গ্রহণ করুন যখন আপনি যুবক
আপনি যখন তরুন বা যুবক তখন আপনার দায়িত্ব অপেক্ষাকৃত কম থাকে। এই সময়ে যদি কেউ সাহসের সাথে ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে পারে এবং তাদের ভুলগুলি থেকে শিখতে পারে তাহলে নিজের ভুল শোধরে সফলতা পুনরুদ্ধার করার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে। ঠিক এই কাজটিই করেছিলেন শাহরুখ খান যখন নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতে ডর, বাজিগর বা আনজামের মতো সিনেমায় নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। যেখানে এইসব নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয়ের ঝুকি তার সমসাময়িক কোন তারকা নিতে চাননি, সেগুলো তিনি করেছিলেন এবং একজন অভিনেতা হিসেবে বলিউডে নিজের অবস্থান পাকাপুক্ত করেছিলেন। ৯০ দশকে যখন ভারতীয় সিনেমার দর্শকদের কাছে চকলেট হিরোদের জয়জয়কার, সে সময়ে এই চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে রাজী হওয়াটা কতোটা ঝুকিপূর্ন ছিলো তা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে। আজ সফলতার এই সর্বোচ্চ অবস্থানে সেই সময়ের এই ঝুকিপূর্ন চরিত্রগুলোই বলিউডের জন্য একেকটা মাইলফলক।
৬। বিভিন্ন ধরনের আয়ের পোর্টফোলিও
শাহরুখ খান শুধু সিনেমা থেকে আয়ের উপর নির্ভরশীল নন। তিনি আয়ের একাধিক উৎস এবং আর্থিক বিকাশের জন্য তিনি যেখানেই বিনিয়োগ করতে পারেন সর্বত্র বিনিয়োগ করেছেন। তার অবিরাম প্রচেষ্টা এবং নিবেদিত কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা তিনি নিজের জন্য একটি আর্থিক বাস্তুসংস্থান তৈরি করেছেন যে তিনি এখন আর সিনেমা থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর নির্ভরশীল নন। প্রযোজনা প্রতিষ্টান, ভিএফএক্স স্টুডিও, দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট, আইপিএল ক্রিকেট দল থেকে শুরু করে টিভি প্রোগ্রাম হোস্ট, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট সব কিছুতেই নিজের অবস্থান পাকাপুক্ত করেছেন। শাহরুখ খান এমন কয়েকজন প্রযোজকের মধ্যে একজন যিনি বক্স অফিসে তার সিনেমার ব্যর্থতার কারনে সেই সিনেমার বিতরণকারীদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে ব্যবসায়িক লসের ভাগীদার হন।
৭। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করা
দিল্লী থেকে খালিহাতে মুম্বাই আসা একজন স্বপ্নবাজ তরুন থেকে ৫,০০০ কোটি রুপির মালিক শাহরুখ খানের এই পথ চলা একদিনের নয়। তার সময়, শ্রম, মেধা আর টাকার সুচিন্তিত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ফল আজকের শাহরুখ খান এবং তার সাম্রাজ্য। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ তিনি বিভিন্ন চ্যানেলে বিনিয়োগ করেছিলেন যা আগত বছরগুলিতে তাকে আর্থিক লাভ এনে দেয়। ২০০৫ সালে তিনি যখন ভিএফএক্স স্টুডিও শুরু করেন বলিউডে তখন ভিএফএক্স নিয়ে কেউ তেমন চিন্তাই করেনি, কিন্তু আজ বলিউডের সিনেমায় ভিএফএক্স অন্যতম প্রধান একটি অংশ।
৮। ঋণ গ্রহণ এড়িয়ে চলা
শাহরুখ খান তার নিজের চলচ্চিত্রের জন্য অন্য কারো অর্থ লগ্নী বা ঋণ গ্রহণ করেন না, যদিও তার উদ্যোগের জন্য অর্থ বিনিয়োগকারীর কোনও অভাব নেই। তিনি নিজের ছবিতে নিজের অর্থ বিনিয়োগ করেন। তিনি বলেছেন যে তিনি নিজের ইচ্ছা বা স্বপ্ন পূরনের জন্য অন্য কারও অর্থকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাননা। শাহরুখ খান মনে করেন যে, যতটা সম্ভব ঋণ নেওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া তিনি ব্যক্তিগতভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগও পছন্দ করেন না।
৯। একটি নির্দিষ্ট সূত্র অনুসরণ করবেন না
শাহরুখ খান বিশ্বাস করেন যে চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি উচ্চ-ঝুঁকির ব্যবসা যেখানে সাফল্যের কোনও সুনির্দিষ্ট সূত্র নেই। ব্যর্থতা সত্ত্বেও তিনি সিনেমা বানাতে থাকেন কারণ তিনি জানেন যে তার প্রচেষ্টার যেকোনটা যেকোন সময়ে ক্লিক করতে পারে। মানুষের পছন্দ, সিনেমা থেকে তাদের প্রত্যাশা এবং চাহিদার প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের প্রবণতাগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাই একজন দুর্দান্ত ব্যবসায়ীর পরিচয়। নেটফ্লিক্সের মতো প্রথাভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তি বর্তমান সময়ে সিনেমাকে দেখার পদ্ধতি পরিবর্তন করছে। নেটফ্লিক্সে সমালোচিত এবং একইসাথে প্রশংসিত বিভিন্ন কনটেন্টের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই এই সুযোগটি হাতছাড়া না করে শাহরুখ খান রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্টের মালিক হিসাবে নেটফ্লিক্সের সাথে চিক্তিবদ্ধ হয়েছেন যার মাধ্যমে এই স্ট্রিমিং জায়ান্টকে রেড চিলিজের অতীতের সমস্ত ছবি তাদের প্লাটফর্মে স্ট্রিমিং এর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, তিনি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্টান থেকে এই প্ল্যাটফর্মের জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে।
১০। কোন কাজই ছোট না
২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাহরুখ খানের সিনেমা “রাইস”-এ একটি সংলাপ আছে, “আম্মাজান বলতেন কোন ব্যবসাই ছোট না আর ব্যবসার চেয়ে বড় কোন ধর্ম নাই”। নিজের সিনেমার এই সংলাপের মত শাহরুখ খানও বিশ্বাস করেন কোন কাজ বা চাকরি ছোট নয়। তিনি নিজেও কম বাজেটের একটি ছোট টেলিভিশন সিরিয়াল “ফৌজি” দিয়ে নিজের ক্যরিয়ার শুরু করেছিলেন যদিও তাঁর স্বপ্ন ছিল একজন বড় সুপারস্টার হয়ে পুরো বলিউডকে শাসন করার।
পরিশেষে ২০১৪ সালে হিন্দুস্থান টাইমসকে দেয়া শাহরুখ খানের একটি সাক্ষাৎকারের কথা দিয়ে শেষ করতে চাই। হিন্দুস্থান টাইমসকে দেয়া সেই সাক্ষাৎকারে শাহরুখ খান বলেছিলেন, “তুমি যদি তোমার জন্য সবচেয়ে লাভজনক কোন চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারো শুধুমাত্র এই কারনে যে তোমার মনে হচ্ছে এটা ঠিক নয়, তাহলেই তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী”। দৃষ্টিভঙ্গি আর চিন্তার পার্থক্যের কারণে শাহরুখ খানের অনেক কিছুর সাথেই দ্বিমত পোষণ করতে পারেন কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শাহরুখ খান অভিনেতার চেয়েও বেশি কিছু। তিনি শুধু একজন অভিনেতা নন যার থেকে অভিনয় শেখা যায়, তাঁর সমগ্র জীবন, কঠোর পরিশ্রম, কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং তার সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এমন গুণাবলী যা প্রত্যেকেরই সন্ধান করা উচিত এবং সেগুলি থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে শাহরুখ খান কেবল তার অভিনয় দিয়েই আমাদের অনুপ্রাণিত করেননি, তাঁর বাস্তব জীবন থেকেও আমাদের অনুপ্রাণিত হওয়ার এবং শিখার আরও অনেক কিছু রয়েছে।
References:
1. “The NEWSWEEK 50: Shahrukh Khan, Bollywood”. Newsweek. 19 December 2008. Retrieved 18 June 2020.
2. Shourie, Dharam (21 December 2008). “Sonia, SRK in Newsweek’s list of 50 most powerful people”. Rediff.com. Retrieved 18 June 2020.
3. Chattopadhyay, Dhiman and Subramanian, Anusha (31 December, 2009). SRK Inc. Retrieved 19 June 2020.
4. Zeitchik, Steven (4 November 2011). “‘One’: Shah Rukh Khan as Bollywood superhero”. Los Angeles Times. Retrieved 18 June 2020.
5. Mittal, Pavni (19 September, 2014). SRK: The greatest businessman can walk away from a deal if it doesn’t feel right. Hindustan Times. Retrieved 19 June 2020.
6. Dhoot, CA Ridhi (7 Jun, 2020). Shahrukh Khan Net Worth 2020 – Car, Salary, Business, Awards, Bio. Retrieved 15 June 2020.
স্পনসরশিপ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার উপার্জন করা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল ‘কলকাতা নাইট রাইডার্স’ এর পাশাপাশি ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগের দল ‘ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সে’র সহ-কর্ণধার শাহরুখ খান।
শাহরুখ খানের আয়ের অনেক উৎস… বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে, ক্রিকেট টিম এবং দুবাই রিয়েল এস্টেট পর্যন্ত তার ব্যবসা!
কোন একটা পত্রিকার রিপোর্টে পড়েছিলাম – ১৯৯৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত শাহরুখ প্রিন্ট মিডিয়ার মোট ২৮১ টি বিজ্ঞাপনে আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ১৭২ টি বিজ্ঞাপনে অংশ নেন। তার সমসাময়ির আর কোনো তারকা এর ধারেকাছেও নেই…
সাম্প্রতিক সময়ের কথা বাদ দিলে, বিজ্ঞাপন বা ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্টের ক্ষেত্রে সমসাময়িক যেকোন তারকার থেকে যোজন যোজন এগিয়ে ছিলেন শাহরুখ খান।
শাহরুখ টাকা আয় করতেন বিজ্ঞাপন মারফত। পান-মসলার বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে বিলাসবহুল গাড়ি সব পণ্যের প্রচারণাতেই অংশ নিতেন তিনি। নব্বই দশকের শেষ দিকে এসে তিনি বিজ্ঞাপন প্রতি তিনি চার কোটি রুপি নিতেন। যদিও এই দশকের শুরুতে তা ছিল অনেক কম। আর এক পর্যায়ে শাহরুখ ছাড়িয়ে যান-ভারতের বিজ্ঞাপন জগতের সবচেয়ে মূল্যবান দুই তারকা-অমিতাভ বচ্চন ও শচীন টেন্ডুলকারকে।
অভিনেত্রী নেহা ধূপিয়া একবার মন্তব্য করেছিলেন, ‘ওনলি সেক্স অ্যান্ড শাহরুখ সেলস ইন ইন্ডিয়া’। ভারতের বাজারে BRAND SRK (শাহরুখ খানের পরিচিতি) এর দাপট মাথায় রেখেই এই মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
অর্থের মূল্য তিনি বোঝেন। কোন খাতে বিনিয়োগ করলে কত লাভ এসবে শাহরুখকে কেউ পেছনে ফেলতে পারবে না।