you're reading...
Business Development

বাহুবলীর নিকট থেকে শেখা ১০টি ব্যবসায়িক শিক্ষ্যা!

তেলেগু সিনেমার স্বপ্নবাজ পরিচালক এস এস রাজামৌলীর স্বপ্নের ছবি ‘বাহুবলী’। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই সিনেমার প্রথম পর্ব মুক্তি পায় ২০১৫ সালে। প্রথম পর্ব মুক্তির পরই নিজের স্বপ্নের প্রতি তার দায়বদ্ধতার ইঙ্গিত দেন এই পরিচালক। ভারতীয় বক্স অফিসের পাশাপাশি ভারতের বাইরেও দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসায় ভাসতে থাকে এই সিনেমা।

প্রথম পর্ব থেকে দর্শকরা যে প্রশ্নের উত্তর খুজে বেড়াচ্ছেন সে প্রশ্নের উত্তর মিলল এসে ২০১৭ সালে। ‘কাটাপ্পা বাহুবলীকে কেনো মেরেছিলো?’ – উত্তর মিলল। এই প্রশ্ন রেখে দ্বিতীয় পর্বের জন্য উম্মাদনা তৈরি করেন রাজামৌলী সে উম্মাদনা ‘বাহুবলী ২’ কে করে তুলে ভারতের ইতিহাসের সর্বকালের সফল সিনেমা। শুধু ব্যবসায়িক সফলতা নয়, ভারতজুড়ে সমালোচকদের কাছে প্রশংসার প্রতিশব্দ হয়ে উঠে ‘বাহুবালী’।

এই সিনেমার রিভিউ অনেক হয়েছে, হয়েছে সিনেমার গল্প এবং চিত্রনাট্যের চুলছেরা বিশ্লেষণ। তবে এই লেখার উদেশ্য সিনেমার রিভিউ নয়। একটু ভিন্ন একটা দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনার জন্যই এই প্রবন্ধ। বিনোদনের পাশাপাশি ‘বাহুবালী’ আমাদের এমন কিছু অর্থায়ন ও বিনোয়গ বিষয়ক শিক্ষা দেয় যা গতানুগতিক ব্যবসা প্রশাসন শিক্ষা থেকে পাওয়া দুষ্কর।

ব্যবসায়িক পৃথিবীতে বিশেষ করে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ সমস্যার পাশাপাশি বাজার এবং প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়ও মোকাবেলা করতে হয়। এইসব প্রতিকূলতার কারনে উৎসাহ হারিয়ে নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতেও দেখা গেছে অনেক ছোট উদ্যক্তাকে। চলুন দেখা নেয়া যাক এইরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ‘বাহুবালী’ কি শিক্ষা দেয় আমাদের।

১। তথ্যই শক্তিঃ কি হচ্ছে জানতে হবে

যখন রাজমাতা শিবগামী জানতে পারলেন যে, বিরোধী রাজ্যের একজন গোয়েন্দা মাহেশমাতি সাম্রাজ্যের মিলিটারি তথ্য নিয়ে গেছে, তিনি এই গোয়েন্দাকে ধরে আনার জন্য দুই রাজপুত্র বাল্লাদেবা এবং বাহুবলীকে আদেশ করেন। এই গোয়েন্দাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার পর মাহেশমাতি সাম্রাজ্যের গোপনীয়তা শুধু রক্ষা হয়নি, শত্রুদের পরিকল্পনাও জানতে পারে মাহেশমাতির রাজদরবার।

একইভাবে একজন নেতা হিসেবে একজন উদ্যক্তাকেও জানতে হবে তার প্রতিষ্ঠানে কি হচ্ছে? কোন কর্মকর্তার কাছে কোন তথ্য কতটুকু নিরাপদ? পাশাপাশি এই তথ্যে চুরি হলে ব্যবসায় কতটুকু প্রভাব পড়তে পারে? তথ্যই শক্তি – কি হচ্ছে সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

২। নিজের প্রতিযোগীদের ভালো করে জানুন

মাহেশমাতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ খুব ভালোভাবেই জানতো যে তাদের শত্রু পক্ষ্য কালাকেয়া তাদের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী। কালাকেয়ার ১০০,০০০ সৈন্যের বিপরীতে মাহেশমাতির সৈন্য সংখ্যা মাত্র ২৫,০০০। তাই তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি অ পরিকল্পনাও সে অনুযায়ী ছিলো।

‘দ্যা আর্ট অব ওয়ার’ বইয়ের লেখক সান যু তার বইয়ে লেখেন, “যদি তুমি নিজের প্রতিপক্ষ্য এবং নিজেকে ভালোভাবে জানো, তাহলে ১০০ যুদ্ধের ফলাফল নিয়েও তোমার ভীত হওয়ার কারন নেই।” ব্যবসার ক্ষেত্রেও একজন নেতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিজের শক্তি এবং নিজের প্রতিদন্ধীদের সম্পর্কে জানা।

৩। কৌশলী এবং দুরদর্শী চিন্তা করা

কালাকেয়ার বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার কৌশল হিসেবে অমেরেন্দ্র বাহুবলী ত্রিশূল মডেলে আক্রমণ সাজানোর পরামর্শ দেয়। বাহুবলীর এই পরামর্শের উপর মাহেশমাতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিশাল আলোচনা করে এবং সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলে। পরবর্তিতে তারা বাহুবলীর উপস্থাপিত ত্রিশূল মডেলে যুদ্ধ পরিচালনা করে এবং জয়লাভ করে।

ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার সাথে এটার বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলা জরুরী। যাদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহন, নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি অন্যদেরও নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে।

৪। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় নষ্ট না করা

অমেরেন্দ্র বাহুবলী এবং ভাল্লাদেবা তাদের সময়ের এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কালাকেয়ার নেতাকে মারার পরিকল্পনা করে। কারন, এই বিশাল বাহিনীকে যুদ্ধে হারানোর একমাত্র উপায় তাদের নেতাকে হত্যা করে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া।

ব্যবসার ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত অনেক জরুরী। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাজার দখলের লড়াইয়ে সফল হবে যদি সে প্রতিষ্ঠান তার প্রতিযোগীদের আগে সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়।

৫। উদ্দেশ্য এবং প্রেরণা দুইটাই সমান গুরুত্বপূর্ণ

একসাথে লড়াই করার জন্য সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য এবং প্রেরণা দুইটারই প্রয়োজন। মাহেশমাতির যুবরাজ বাহুবলী তার কথা এবং বীরত্ব দিয়ে রাজ্যে রক্ষার উদ্দেশ্য অর্জনে সৈন্যদের অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হন। তার এই প্রেরণাতেই মনোবল ভেঙ্গে পড়া সৈন্যবাহিনী নতুন করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিজয় ছিনিয়ে আনে।

একইভাবে, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সফলতা নির্ভর করে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের লক্ষ্য অর্জনের অনুপ্রেরণার উপর। ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নেতৃবৃন্দের অন্যতম প্রধান কাজ হলো তাদের সহকর্মীদের সবসময় কাজের ব্যপারে প্রণোদনা দিয়ে অনুপ্রাণিত করা।

৬। সীমিত সম্পদের সৃজনশীল ও সর্বোত্তম ব্যবহার

বিজ্জালা দেবা যুদ্ধের প্রস্তুতিতে আধুনিক এবং কার্যকরী অস্ত্র নিজের ছেলে বাল্লাল দেবাকে দিয়ে বাহুবলীকে দেন দুর্বল সব অস্ত্র। এই পরিপ্রেক্ষিতে নিজের দুর্বল অস্ত্রের পরিপূরক হিসেবে অমেরন্দ্র বাহুবলী বিশাল বিশাল কাপড়ের মধ্যে আগুন লাগিয়ে শত্রুপক্ষকে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তার এই  সৃজনশীল আক্রমণের কৌশল অধিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ব্যবসার ক্ষেত্রেও অনেকের প্রতিযোগীদের তুলনায় দূর্বল সম্পদকে সৃজনশীল উপায়ে ব্যবহার করে সফল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়। একজন নেতা হিসেবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে তার সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের উপায় খোঁজে বের করতে হবে।

৭। লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি মানবতার রক্ষা

কালাকেয়ার সৈন্যবাহিনী মাহেশমাতির সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নিজেদেরকে আক্রমণ থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলো। বাল্লাল দেবা, তার রাজ্যের সাধারণ জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই শত্রুদের আক্রমণ করে এবং এতে অনেক সাধারণ মানুষ মারা যায়। অপরদিকে বাহুবলী শুত্রুদের আক্রমণ করার আগে নিজের রাজ্যের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়িক মুনাফার পাশাপাশি মানবতার মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ন অংশ। মানবিক দিক বিবেচনা না করে ব্যবসার মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে বাজার দখলের লড়াই ওই কোম্পানির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি খারাপ করে ফেলতে পারে।

৮। প্রতিযোগীর দূর্বল জায়গায় আঘাত

বাল্লাল দেবার তরবারির গাড়িকে ঠেকাতে কালাকেয়ার সৈন্যরা তার গাড়ির চাকায় আঘাত করে তা ভেঙ্গে দেয়। বাল্লাল দেবাকে ঠেকানোর এটাই ছিলো সবচেয়ে ভালো উপায়। অন্যদিকে, কালাকেয়ার নেতা বড় হাতির পিঠে চড়ে যুদ্ধ করে। তার সাথে লড়াই করার জন্য বাল্লাল দেবা সেই হাতির মাথায় আঘাত করে হাতিকে মাঠিতে পতিত করে।

একইভাবে অনেকসময় প্রতিযোগীর সামনাসামনি লড়াই করতে না পারলে, তার দূর্বল জায়গায় আঘাত করতে হয়। একজন নেতাকে তার প্রতিযোগীর সেই দূর্বল জায়গা বের করে রণকৌশল সাজাতে হবে।

৯। ভয়কে জয় করে এগিয়ে যাওয়া

যখন কালাকেয়ার সৈন্যপক্ষ্য কাটাপ্পার নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলে এবং মাহেশমাতির পতাকা ফেলে দিয়ে নিজেদের পতাকা উত্তোলন করে তখন মাহেশমাতির সৈন্যরা ভয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে। বাহুবালী অবস্তার গুরুত্ব বোঝতে পেরে তার সৈন্যদের উৎসাহিত করে বলে, “যদি তোমারা মৃত্যুকে মোকাবেলা করতে পারো, তাহলে তোমাদের জন্য কোনকিছু অর্জন অসম্ভব নয়”। বাহুবালীর এই কথা সৈন্যদের চরমভাবে অনুপ্রাণিত করে এবং তারা কালাকেয়ার সৈন্যদের যুদ্ধে হারিয়ে দিতে সক্ষম হয়।

ব্যবসায় প্রতিযোগীরা বেশীরভাগ সময়ই কিছু ভূল তথ্য প্রচার করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মনবল ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করে। অনুপ্রেরণা এবং প্রেষণা দিয়েই তখন একজন সফল নেতা তার সহকর্মীদের নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে।

১০। সঠিক ও শক্তিশালী নেতৃত্ব

মাহেশমাতির সৈন্য সংখ্যার চেয়ে চার গুন বেশী সৈন্য নিয়েও কালাকেয়া বাহুবলীর কাছে পরাজয় বরন করে। কালাকেয়ার পরাজয়ের পর তার সৈন্যরা আত্নবিশ্বাস হারিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী এবং ক্ষমতাবান নেতার প্রয়োজন যেকোন ব্যবসার সফলতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। দুর্বল নেতৃত্ব অপার সম্ভাবনা এবং অসীম সম্পদের অধিকারী একটি প্রতিষ্ঠানকেও ধ্বংস করে দিতে পারে।

কৃতজ্ঞতাঃ বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকায় প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপক হার্শ পামনানির লেখা অবলম্বনে।

About Md. Moulude Hossain

FinTech | Digital Payment | Product Strategy | Product Management | EMV | Business Development

Discussion

7 thoughts on “বাহুবলীর নিকট থেকে শেখা ১০টি ব্যবসায়িক শিক্ষ্যা!

  1. “ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়িক মুনাফার পাশাপাশি মানবতার মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ন অংশ” – sound like Myth now days! However it was a good read indeed.

    Posted by Shaik Shamim Hasan | June 4, 2017, 1:36 pm
    • ব্যবসায় নীতিতে একটা কথা আছে, “Business that makes nothing but money is not a business at all.” – কিন্তু আপনার কথার সাথে একমত। আজকাল ব্যবসায়ীদের কাছে মুনাফা আর টাকা ছাড়া অন্যসবকিছুই মূল্যহীন!

      Posted by Md. Moulude Hossain | June 9, 2017, 9:45 pm
  2. Thanks for taking out these points. This movie not only entertains but also gives some serious entrepreneurial lessons. Waiting for more of like this content.

    Posted by ‎Jihan Abdullah | June 15, 2017, 5:33 pm
  3. দর্শকদের জন্য বিনোদনের সিনেমাটিক ভ্যালুর পাশাপাশি বাহুবলী আমাদের আরো অনেক ধরনের শিক্ষা দেয়। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে এর প্রয়োগ বোঝা এবং এগুলোর অন্তর্ভুক্তি কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটাই দেখার বিষয়।

    Posted by Rahat Saifullah Sumon | July 3, 2017, 8:53 pm
  4. সত্যি! বাহুবলী শুধু একটি সিনেমা না, পুরা একটা বই। যে বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায় আমাদের আর্থিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়।

    Posted by Syed Ansari | September 16, 2017, 11:47 pm

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

upay-GP Offers

Blog Stats

  • 103,115 hits

Archives

upay bonus

Recent Post

%d bloggers like this: