you're reading...
Random Thoughts

করোনা ভাইরাস এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব – মিথ না বাস্তবতা

ed_2_184

কোন একটি জটিল সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রক্রিয়া বোঝার জন্য বেশ কার্যকরি একটি সামাজিক তথ্য হলো “Punctuated Equilibrium”। ১৯৭২ সালে জীববিজ্ঞানী স্টিফেন জে গোল্ড এবং নাইলস এলড্রেজ দ্বারা প্রস্তাবিত, এই তথ্য মতে যখন একটি সামাজিক ব্যবস্থা তার টিকে থাকার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখনই সেই ব্যবস্থা হঠাৎ আমূল পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়। এই পরিবর্তন প্রক্রিয়া সাধারণত কোন নির্দিষ্ট ধারা মেনে হয়না বরং সমাজের মানুষের উচ্চ উত্তেজনা বা বিশেষ কোন সঙ্কটের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে।

বর্তমানে সারা বিশ্ব লড়াই করছে এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে – করোনা ভাইরাস বা COVID-19! ব্যবসা, ভালোবাসা, খেলা, বন্ধুত্ব সবই আজ স্থবির। যে শহরকে বলা হয় “The City Never Sleep”, সে শহর আজ দিনের বেলায়ও ঘুমিয়ে থাকে, যে শহরের বাতাসে ভালোবাসার মুগ্ধতা সে শহরের মানুষ আজ ঘরবন্ধি। সে শহরের তীর্থযাত্রা জাগতিক-পরলৌকিক মুক্তির মুগ্ধতা, সে শহরে আজ রমজানের পবিত্রায় নীরবতার কান্না। পুরো পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ এখন বন্ধ – দেশে দেশে ক্ষুধা আর মৃত্যুর মাঝে অদ্ভুত এক স্নায়ু যুদ্ধের পাঁয়তারা। সামাজিক ব্যবস্থা বদলে নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার লক্ষণ হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এই করোনা মহামারী। যদি  “Punctuated Equilibrium” তথ্যে উল্লেখিত “সঙ্কট” এর কথা পর্যালোচনা করি তাহলে COVID-19 আমাদের সেই সঙ্কটেরই ইঙ্গিত দেয়।

তাহলে প্রশ্ন আসে, COVID-19 নামক এই সঙ্কট বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় কি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে? আপাত দৃষ্টিতে, উদ্ভূত পরিস্থিতে মানুষ, প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রগুলো যে চাপের মধ্যে টিকে থাকার যুদ্ধ করছে তাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতা অনেকটাই সুস্পষ্ট। দৈহিক, জৈবিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে অদৃশ্য দেয়ালের পয়োজনীয়তা একটি বয় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের যৌক্তিকটাকে নতুন করে সামনে নিয়ে আসছে। মহামারীটি আমাদের সকলকে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি – কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, ড্রোন, থীডি প্রিন্টিং এবং আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে আমাদের সুস্থ থাকার পাশাপাশি অর্থনীতির রূপান্তরের রাস্তা দেখাচ্ছে। একই সাথে আমাদের যুগান্তকারী প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি এবং এই উদীয়মান প্রযুক্তিগুলির নতুন উপযগিতা তৈরির জন্য চিন্তার দ্বার খোলে দিয়েছে।

করোনা বা COVID-19 মহামারীর সাথে লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এবং দেশের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের দিকে আলোকপাত করলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কিছু ধারনা পাওয়া যাবে –

১। চাইনিজ দুইটি AI-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান Megvii এবং Baidu বেইজিং এর সাবওয়ে প্যাসেঞ্জারদের বডি ডিটেকশন, ফেস ডিটেকশন এবং ইনফ্রারেড ক্যামেরার মাধ্যমে বডি টেম্পারেচার মাপা এবং মাস্ক পরা কিনা সেটা পরীক্ষা করার প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। শুধু তাই নয়, যদি কারো শরীরে সন্দেহ মাত্রায় তাপমাত্রা পাওয়া যায়, সাথে সাথে সেই ব্যক্তির কোম্পানিতে রিপোর্ট করা হয়েছে।

২। করোনা আক্তান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসা সবাইকে আইসোলেশনে রাখার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া স্মার্ট সিটি হাব ব্যবহার করে। স্মার্ট সিটি হাব ব্যবহারের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সবাইকে যথাযত সময়ে ট্র্যাকিঙয়ের মাধ্যমে আইসোলেশনে নেয়া সম্ভব হয়েছে।

৩। ইতালীতে করোনা ভাইরাসে সর্বোচ্চ ইনফেক্টেড এলাকাগুলোর মধ্যে একটি Brescia-তে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইন্টেন্সিভ কেয়ার ডিভাইসের Venturi ভাল্ভের ঘার্টতি পড়ে। সেই ভাল্বের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এত অল্প সময়ে যোগান দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। এই সময়ে এগিয়ে আসে ইতালির অন্যতম বিখ্যাত প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান Isinnova, যারা তাদের থ্রীডি প্রিন্টারের মাধ্যমে কয়েক ঘন্টার ভেতর ভাল্ভটি ডিজাইন করে এবং প্রিন্ট করে সাপ্লাই দেয়।

৪। COVID-19 আক্রান্তদের চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকেন চিকিৎসা সেবীরা। রোগীদের কাছাকাছি যাওয়ার কারনে খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন তারা। এই প্রেক্ষিতে, বেইজিঙয়ের রবোটিক কোম্পানি CloudMinds উহানের একটি হসপিটালে ১৪টি রোবট দেয়য যেগুলো ওই হসপিটালে COVID-19 আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়েছে। এই রোবট গুলোর মাধ্যমে আক্রান্তদের জিনিসপত্র পরিষ্কার করা, আক্রান্তদের ঔষধ দেয়া এবং তাপমাত্রা মাপার কাজ করতে পেরেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

৫। জার্মানি এবং ইতালি বিগ ডাটা এ্যনালাইসিস আর মেশিন লার্নিং ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল ফোন লোকেশন আর মোবাইল এ্যপ দিয়ে আক্রান্তের বন্ধু, আত্নীয়, তার এক মাসের ট্রাভেল হিস্ট্রী, এমনকি সে কোন ট্রেনের কত নাম্বার সিটে বসেছে, তার আসেপাশে কোন কোভিড রোগী ছিলো কিনা এগুলো যেমন মুহুর্তেই তারা বের করেছে। আক্রান্তের Close Contact খোঁজে বের করার পাশাপাশি তার শারীরিক অবস্থা ও ঝুঁকির প্রেক্ষিতে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে ডিপ লার্নী আর নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে।

৬। চায়নার অনেক ই-কমার্সের অনেক বড় বড় কোম্পানি যেমন Meituan Dianping, JD.com, Ele.me (Owned By Alibaba) করোনা মহামারীতে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের কাছে খাবার, মেডিকেল গুডস ইত্যাদি পৌছে দেয়ার জন্য Self-Driven রোবোটিক কার চালু করে।

৭। ডিপ লার্নিং এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক BIM (Building Information Modelling) সিস্টেম ব্যবহার করে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ১০০০ শয্যা ও ৩০০ আই সি ইউ সম্পন্ন হাসপাতাল তৈরী করেছে চায়না।

এছাড়াও টেলিমেডিসিন, অনলাইনে শিক্ষ্যা, ডিসটেন্স লার্নিং, হোম অফিসের মতো আরো অনেক ছোট ছোট প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা গেছে এই মহামারীতে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের এইসব উদাহরণ কিছুটা হলেও ইঙ্গিত দিচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের। COVID-19 যদি “Punctuated Equilibrium” তথ্যের সঙ্কট হয় তাহলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সেই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের একটা মাধ্যমে।

COVID-19 এর এই মহামারী মানুষ এবং মেশিনের মধ্যে সংযোগের একটা অনেক বড় উপলক্ষ্য হিসেবে দেখা দিয়েছে, যেখানে মানুষ এখন আরো বেশী করে মেশিনের সাথে সংযুক্ত থাকবে। প্রতিটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত হবে এক একটি “Connected Society” আর এই পরস্পর সংযুক্ত প্রযুক্তির মাধ্যমেই তৈরী হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার স্মার্ট সিটি। মানুষের চিন্তার ধরনের পাশাপাশি বদলে যাবে মানুষের জীবন যাপনের ধারা, বদলে যাবে চিন্তার ক্ষেত্র। COVID-19 নামক এই সঙ্কট থেকেই হয়ত জন্ম নিবে নতুন সামাজিক ব্যবস্থা।

তথ্যসূত্রঃ

    1. Chinese subways are using artificial intelligence facial recognition scanners
    2. Can Artificial Intelligence technologies be used to prevent and control the spread of coronavirus?
    3. Coronavirus is the first big test for futuristic tech that can prevent pandemics
    4. China’s e-commerce giants deploy robots to deliver orders amid coronavirus outbreak
    5. Italian hospital saves Covid-19 patients lives by 3D printing valves for reanimation devices
    6. Coronavirus, treating COVID-19 patients with robots?
    7. COVID-19: How Korea is using innovative technology and AI to flatten the curve
    8. China is building 1,000-bed hospital in 10 days for coronavirus patients

 

About Md. Moulude Hossain

FinTech | Digital Payment | Product Strategy | Product Management | EMV | Business Development

Discussion

5 thoughts on “করোনা ভাইরাস এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব – মিথ না বাস্তবতা

  1. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সময়ের দাবি। করোনা ভাইরাস কিছু কিছু ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে তরান্বিত করবে। লেখাটি ভালো লেগেছে, শুভেচ্ছা নিবেন।

    Posted by Arif Morshed Chowdhury | June 3, 2020, 9:16 pm
  2. আপনার সাথে একমত। অ্যালগোক্রেসীর যুগ আসছে সামনে। তবে, মানুষ এই ডিপ সার্ভেলেইন্স এতো সহজে মানবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।

    Posted by Pranto Shahriar | June 3, 2020, 9:17 pm
    • অ্যালগোক্রেসীর যুগে আমরা ইতিমধ্যে আছি। গুগল, ফেসবুক এর মতো ফ্রী সার্ভিস যারা দিচ্ছে তারাতো এই তথ্য বিক্রীর উপর নির্ভর করে ব্যবসা করছে, যার পুরোটাই আমাদের অজান্ত। সামনে হয়তো এটাকে আইনগত বৈধতা দিয়ে অ্যালগোক্রেসীকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়া হবে।

      Posted by Rezwan Hossain Shishir | May 29, 2020, 8:09 pm
  3. The scientific collaboration, purpose-driven hacking and political leadership that will bring us out of the pandemic are precisely the tools that can unlock success in reducing inequality, adapting societies to the impacts of climate change and restoring our natural environment to a more balanced state. We must create a new punctuated equilibrium that maximizes 4IR benefits inclusively and sustainably.

    Posted by Mohammad Khalid Ullah | June 3, 2020, 9:27 pm

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

upay-GP Offers

Blog Stats

  • 100,992 hits

Archives

upay bonus

Recent Post

%d bloggers like this: