চাণক্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০-২৮৩ অব্দ) ছিলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় গুরু (শিক্ষক), দার্শনিক ও রাজ-উপদেষ্টা। উপমহাদেশের উচ্চতর জ্ঞান আহরণের প্রাচীন ও শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপিঠ খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে বর্তমান পাকিস্তানের তক্ষশীলায় তাঁর জন্ম এবং পরবর্তীতে তক্ষশীলা বিদ্যাপিঠের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির শিক্ষাগুরু হিসেবে ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের উত্থানে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। কিংবদন্তী আছে, মগধ রাজ্যের পরাক্রমশালী নন্দ বংশের শেষ রাজা, যিনি তার অন্যায় শাসনের জন্য প্রজাসাধারণের কাছে ভীষণ অপ্রিয় ছিলেন, একবার চানক্যকে অপমান করেন। চানক্য এই অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। এদিকে নন্দ রাজার পদস্থ ও উচ্চাভিলাষী তরুণ সামরিক কর্মকর্তা চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসন দখলের ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে প্রাণ বাঁচাতে তাকে বিন্ধালের জঙ্গলে পলাতক ও নির্বাসিত জীবন বেছে নিতে হয়। ঘটনাচক্রে চানক্যের সাথে চন্দ্রগুপ্তের সাক্ষাৎ ঘটে। চন্দ্রগুপ্ত তাঁর জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে চানক্যকে গুরু, উপদেষ্টা ও মন্ত্রণাদাতা হিসেবে মেনে নেন। অতঃপর চানক্যের সক্রিয় সহযোগিতায় চন্দ্রগুপ্ত একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন এবং গুরুর সুনিপুণ পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে শেষপর্যন্ত নন্দরাজাকে সিংহাসনচ্যুত করতে সক্ষম হন। মগধের সিংহাসনে আরোহণ করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। মৌর্য সাম্রাজ্য ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসে প্রথম সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য। পরবর্তীতে পশ্চিম ভারতের সকল রাজ্য একে একে জয় করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন চন্দ্রগুপ্ত। এই বিশাল সাম্রাজ্য দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য তিনি একটি মন্ত্রীপরিষদ গঠন করে চানক্যকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন।
চাণক্যকে কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত নামেও অভিহিত করা হয়। ‘কূটিলা গোত্র’ থেকে উদ্ভুত ছিলেন বলে পরবর্তীতে গোত্র নামটিকে টিকিয়ে রাখার সদিচ্ছা থেকে ‘কৌটিল্য’ ছদ্মনাম ধারণ করে প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রবিজ্ঞান গ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্র’ লিপিবদ্ধ করেন বলে জানা যায়। চাণক্যকেই ভারতের প্রথম অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করা হয়। চাণক্য এর লেখা ৪২ টি শ্লোক নিয়ে ২০২ পৃষ্ঠার বইটি হচ্ছে “চাণক্য নীত শাস্ত্র”। ‘অর্থশাস্ত্র’ এবং ‘চাণক্য নীতি’ নামক দুইটি গ্রন্থ চাণক্য রচনা করেছিলেন বলে মনে করা হয়। অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে অর্থনীতি, রাষ্ট্রের কল্যাণকারী ভূমিকা, পররাষ্ট্রনীতি, সামরিক কৌশল, শাসকের ভূমিকা সম্বন্ধে বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থশাস্ত্রের অধিকাংশ শ্লোকের রচয়িতা হিসেবে কৌটিল্যের নাম পাওয়া যায়, একটি শ্লোকে বিষ্ণুগুপ্তের নাম পাওয়া যায়। চাণক্য রচিত গ্রন্থগুলোতে মানুষের জীবনের সামগ্রিক জীবন দর্শন সম্পর্কে ধারয়া পাওয়া যায়। অর্থনীতি এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কৃষি নীতি, জমি নীতি, কুটির শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সমাজে রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং আজকের শিল্প বিপ্লব সম্পৃক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও পরিবেশ, নগরায়ণ নিয়ে যেসব নির্দেশ দিয়েছিলেন তা আজও প্রাসঙ্গিক।
এই লেখায় ‘চাণক্য নীতি’ থেকে পাওয়া কিছু বক্তব্য বর্তমান সময়ে ব্যবসা উন্নয়নের কৌশল নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্বাস করি। ব্যবসা উন্নয়নে এইরকম কিছু ‘চাণক্য নীতি’র প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োগ নিয়ে আলোচনার প্রয়াস থাকবে এই লেখায়।
১। সবসময় অপরের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করা ভাল। কারণ আমাদের কাছে এত সময় নেই, যে আমরা প্রথমে ভুল করব এবং পরে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজটি করব।
বর্তমান সময়ের মত প্রতিযোগিতা নির্ভর বাজারে প্রতিটি শিক্ষা নিজের ভুল থেকে শেখার সময় বা সামর্থ কোনটাই নেই। তাই একজন ব্যবসা উদ্যোক্তা বা ব্যবস্থাপককে অবশ্যই অন্যদের ভূল থেকে শিখার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার কথা মাথায় রাখতে হবে। যেমন, হালাল সাবান বলে “Aromatic Beauty Soap” এর Market Positioning সাময়িক সময়ের জন্য ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারলেও দীর্ঘ মেয়াদী সুবিধা নিতে ব্যর্থ। একটি পণ্যের Market Position সেই পন্যের বাজারে টিকে থাকাতে পারা না পারার জন্য অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এই চাণক্য নীতি অনুসারে যে কাজটি ভুল করা হয়েছে, সেই কাছে থেকে শিক্ষা নিলে আমাদের সময় বাঁচবে এবং সঠিক পথে সফলতার দিকে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারা যাবে।
২। যে সাপের বিষ নেই, সেই সাপেরও উচিত, তার কাছে বিষ রয়েছে সেটা দেখানো।
বাজারে নতুন প্রবেশকারী একটি কোম্পানি প্রাথমিকভাবে দাঁতবিহীন সাপের মতো, যার কোন নির্দিষ্ট মার্কেট শেয়ার নেই, বাজার বা ক্রেতা সম্পর্কে বাস্তবিক জ্ঞান নেই। কিন্তু সেই কোম্পানিকেও বাজারের প্রতিষ্টিত কোম্পানির দ্বারা প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জের মুখে পরতে হয়। এই ক্ষেত্রে, দাঁতবিহীন সাপটি বিষাক্ত না হলেও বিষাক্ত সাপের মতো আচরণ করা উচিত যাতে এটি প্রতিযোগীদের দ্বারা পিষ্ট হয়ে মারা না যায়। এটির জন্য খুব মরিয়া না হয়ে বাজারের শেয়ার এবং ব্র্যান্ডের নামটি গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি তার ক্ষমতাগুলিও জেনে রাখা উচিত। পণ্যের মধ্যে Differentiating Features না থাকলেও এর মার্কেটিং কৌশলে বিন্নতার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে গ্রহণযোগ্যতার চেষ্টা করতে হবে।
৩। কখনোই কারো সাথে নিজের কাজ অথবা যে কাজ করতে চলেছেন তা শেয়ার করবেন না। কাজটি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত যা করতে যাচ্ছেন তা গোপন রাখুন।
একটি ব্যবসায়ের সবচেয়ে বড় হুমকি আসে তার প্রতিযোগীদের কাছ থেকে। শক্ত প্রতিযোগিতার কারনে অনেক সময় কোম্পানিগুলোকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় গুরুতর পদক্ষেপ নিতে হয়। নিজেদের উদ্ভাবিত পণ্য এবং প্রযুক্তির অধিকার নিজের কাছে রাখতে ট্রেডমার্ক, পেটেন্টস, কপিরাইট ইত্যাদি তারই ফলাফল এবং প্রদত্ত চাণক্য সুত্রের নিখুঁত উদাহরণ। ব্যবসার কৌশল এবং আপনার পন্য/প্রযুক্তিতে নতুনত্ব এবং নতুন ধারণাগুলি প্রতিযোগীদের কাছ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ খুবই জরুরি। আপনার কৌশল সম্পর্কে যদি আপনার প্রতিযোগীরা আবগত হয়ে যায় তাহলে, আপনি যে কাজটি করতে চলেছেন তাতে তারা সেই কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে অথবা সেই কৌশল নিজেরা বাস্তবায়ন করে সুবিধা নিয়ে নিতে পারে। তাইতো চাণক্য উল্লকেহ করেছেন, আপনার অন্যের থেকে আলাদা কি আছে তার গোপনীয়তা সংরক্ষণ করুন তাহলে আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য এর সুবিধাটি ভোগ সক্ষম হবেন।
৪। কোনও কাজ শুরু করার আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করুন — কেন এই কাজটি আপনি করছেন? এর ফল কী হতে পারে? এটা কী ধরনের সাফল্য আনতে সক্ষম?
চাণক্যে নীতির এই বক্তব্য বাজার গবেষণা, পরিকল্পনা এবং বিপণনের কৌশলের সাথে সম্পর্কিত, ব্যবসায়ের জন্য যার গুরুত্ব আমরা সবাই জানি। গবেষণা প্রলুব্ধ একটি যথাযথ পরিকল্পনা ব্যতীত কোনও ব্যবসা সফল হতে পারে না। আর ব্যবসা প্রতিষ্টানকে এটা মনে রাখতে হবে যে, গবেষণা সংক্রান্ত খরচ কোন ব্যয় নয়, এটি ব্যবসার প্রয়োজনে করা একটি দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ। ব্যবসা উন্নয়নে গবেষণার এই উপযোগিতা ৩০০০ বছর আগেই চাণক্য ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।
৫। একজন মানুষকে কখনো খুব বেশি সৎ হওয়া উচিত না। মনে রাখবেন সোজা গাছগুলোই কিন্তু আগে কাটা হয়।
সম্পূর্ন সততাকে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি হিসেবে ব্যবহার করা ব্র্যান্ডগুলি সাধারণত তাদের লক্ষ্য অর্জনের যে পরিকল্পনা করে তাতে সফল হয় না। তবে ‘এতটা সৎ না’ ধরনের ব্র্যান্ডগুলি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। প্রতারণা ও অসততা কোনও পণ্য বাজারজাত করার সঠিক উপায় নয় তবে সম্পূর্ণ সততাও যুক্তিযুক্ত নয়। যেমন, তামাকজাতীয় পণ্যের ব্র্যান্ড, তারা বিজ্ঞাপনের সময় পণ্যটির সামগ্রী এবং এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি সত্যই বর্ণনা করে না তবে একই সাথে তাদের প্যাকেটে মুদ্রিত একটি সংবিধিবদ্ধ সতর্কতা থাকায় লোককে বিভ্রান্ত করার জন্য তাদের দোষ দেওয়া যায় না। সুতরাং যদি কোনও ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্টান তার পণ্যটির খারাপ প্রভাব বা অসুবিধাগুলি সম্পর্কে সৎ ও সরলভাবে প্রচারে যায় তবে এটি গ্রাহককে পণ্য থেকে আরও দূরে নিয়ে যেতে পারে।
৬। কোনও ভয় রেখে কাজ করবেন না। ভয় বা আশঙ্কা জাগ্রত হলেই তাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করুন।
প্রতিযোগীদের কাছে নিজের মার্কেট শেয়ার বা জনশক্তি হারানোর আশঙ্কা যেকোন কোম্পানির জন্য স্বাভাবিক বিষয়। এই ক্ষেত্রে কোম্পানির ভীত না হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ। কোন কৌশলগত ভুলের কারনে প্রতিযোগীরা যদি বাজারে সুবিধা নিতে চেষ্টা করে তাহলে, সঠিক সময়ের অপেক্ষ্যা না করে, নতুন কৌশল দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। বর্তমানের অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং চাহিদাযুক্ত বাজারে অপেক্ষা যেকোন কোম্পানির জন্য বিলাসিতা হয়ে উঠতে পারে।
৭। বিষ থেকে মধু বের করে নিন, কাদামাটি ধুয়ে স্বর্ণ আহরণ করুন। সমাজের নীচের দিকে থাকা লোকের কাছ থেকেও জ্ঞান আহরণ করুন
বর্তমানের ক্রমবর্ধিত বাজারের জন্য কোন কিছুই খুব ছোট বা খুব বেশি বড় নয়। গ্রামীণ বা তুলনামূলক কম উন্নত অঞ্চলগুলিও নগর খাতের মতো পণ্যের চাহিদাকে প্রভাবিত করতে পারে। সুতরাং প্রতিটি ক্ষেত্র এবং ক্ষেত্রকে স্ব-স্বীকৃত ধারণার ভিত্তিতে কোন বৈষম্য ছাড়াই দক্ষতার সাথে পর্যালোচনা পূর্বক ব্যবসার কৌশল নির্ধারন করা উচিৎ (বিলাসবহুল পণ্যের জন্য নয় তবে এফএমসিজির এবং এই জাতীয় অন্যান্য নিম্ন ও মাঝারি দামের পণ্যগুলির জন্য)। চাণক্যের এই বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তুই হচ্ছে বাজারের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান তথ্য ও জ্ঞানের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কোম্পানি তাদের ব্যবসায়ের বিকাশের জন্য অধিগ্রহণ করতে পারে। প্রতিটি বয়সের গ্রাহক, ভিন্ন ডেমোগ্রাফি, লিঙ্গ, আয়ের মানুষ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবে অবদান রাখে, তাই কোনও পক্ষপাত এবং ধারণাগত বৈষম্য ছাড়াই প্রতিটি গ্রুপকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
৮। প্রতিটি বন্ধুত্বের পিছনে কোন না কোন রকম স্বার্থ অবশ্যই থাকে। এরকম কোনো বন্ধুত্ব নেই, যেখানে স্বার্থ নেই
যেকোন ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিষ্টানের কর্তাব্যক্তিদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, বেশিরভাগ লোক নিজের স্বার্থের জন্য আপনার সাথে বন্ধুত্ব করবে। ব্যবসার আর্থিক বিষয় থেকে শুরু করে কর্ম কৌশল নির্ধারনসহ সব ক্ষেত্রেই নিজের নিরাপত্তার বিষয় আগে বিবেচনা করতে হবে। ব্যবসার প্রয়োজনে কোম্পানিগুলোকে অনেক সময়ই একে অপরের সাথে বিভিন্ন সমঝোতা বা পার্টনারশীপ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে চুক্তি নিশ্চিত করার আগে একে-অপরের স্বার্থের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাইতো চাণক্য বলেছেন, বন্ধুত্ব করুন, তবে কাউকে খুব বেশি বিশ্বাস না করে।
৯। শত্রুর ক্ষমতার সীমা রয়েছে। তারও দুর্বলতা রয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত শত্রুর দুর্বল দিকগুলি জানতে পারছেন, ততক্ষণ শত্রুর সঙ্গে সংঘাতে না-যাওয়াই ভাল। দুর্বলতা জানা গেলে তার সঙ্গে সংঘাতে যাওয়া যেতে পারে।
ব্যবসার শুরু বা কৌশল নির্ধারনের ক্ষেত্রে SWOT Analysis করা খুবই সাধারণ বিষয় এখন। কিন্তু দেখুন আজ থেকে ৩০০০ বছর আগেই চাণক্য এই SWOT Analysis এর কথা বলে গেছেন। যেকোন ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত বা কৌশল নির্ধারনের আগে প্রতিষ্টান তার প্রতিযোগীর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে হবে। যেকোন প্রতিযোগীতায় জয়ী হওয়ার জন্য নিজের শক্তির জায়গা জানা এবং প্রতিযোগীর দূর্বলতা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা সমান গুরুত্ব বহন করে। চাণক্য তার এই বক্তব্যে স্পষ্টভাবেই বলেছেন যে, প্রতিযোগীর দূর্বলতার সম্পর্কে ধারণা না থাকলে তার সাথে সংঘাতে আ যাওয়াই শ্রেয়।
১০। বিশ্বের বৃহত্তম শক্তি যুব সমাজ এবং মহিলার সৌন্দর্য
আজকাল মার্কেটাররা এটি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং কাজেও লাগাচ্ছেন। বাংলাদেশের বর্তমান জনগোষ্ঠীর বড় অংশই যুবক বয়সের। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা পণ্য উদ্ভাবন এবং মহিলাদের সৌন্দর্য বিষয়ক পণ্য এখন ব্যবসার জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষন। আমরা দেখতে পাই যে কোম্পানিগুলো তাদের বিপণনের প্রচেষ্টাগুলিকে বাজারের এই দুটি প্রভাবশালী শক্তিকে ক্রেন্দ্র করে সাজাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়াম সানডোজ, মহিলাদের জন্য হরলিক্স, গ্রামীণফোনের ডিজুস, রবির বন্ধু অফার ইত্যাদি।
এইগুলো চাণক্যের সর্বাধিক বিখ্যাত এবং সুপরিচিত কিছু বক্তব্য যা ব্যবসায়ের উন্নয়নের দিক সম্পর্কিত কিছু ধারনা দিতে পারে। এর বাইরে আরও অনেকগুলি শ্লোক বা বক্তব্যের ব্যবসায়ে প্রয়োগযোগ্যতার পর্যালোচনার মাধ্যমে সেগুলি থেকে দরকারী অন্তর্দৃষ্টি নেওয়া যেতে পারে। চাণক্য তিন ধরণের সাফল্যের কথা বলেছেন – পরামর্শ দ্বারা সাফল্য, ক্ষমতা দ্বারা এবং শক্তি দ্বারা। যদিও প্রথম দুটি যথাক্রমে উপদেষ্টা এবং কর্তৃত্বের উপর নির্ভরশীল, তৃতীয়টি ইচ্ছা শক্তি, উৎসাহ এবং আবেগের সাথে সম্পর্কিত, যা একজন ব্যবসা উদ্যোক্তার প্রয়োজনীয় গুণ। বাজারের প্রয়োজনীয়তা বোঝা, নতুন ক্রেতা তৈরি করার সময় পুরাতন ক্রেতারদের স্মরণ করা এবং তাত্ক্ষণিকভাবে সমস্যার সমাধান করা – এই সবকিছু মিলেও ব্যবসা আর এটিই হলো চাণক্যের সংজ্ঞায় রাজার কর্তব্য। সুতরাং যদি শেখার ইচ্ছা, কার্যকর শ্রবণ ক্ষমতা, প্রতিফলন করার ক্ষমতা, মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা এবং সত্যের অভিপ্রাণীর মতো গুণাবলী ধারণ করেন তবেই একজন উদ্যোক্তাই হতে পারবেন “কিং অব দ্যা মার্কেট”।
চাণক্য নীতির প্রয়াগ জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই। জীবন দর্শন থেকে শুরু করে বিয়ে, ব্যবসা, প্রশাসনিক কার্যক্রম ইত্যাদি। তবে ব্যবসাতে প্রয়োগের এই দৃষ্টিভংগি বেশ ভালো লেগেছে। লিখতে থাকুন।
Awesome post!
I didnot follow most of them and missed my target, but will definitely ensure this is followed in my future.
“Failing at the earliest will help you succeed till the last!”
অনেকেরই ধারণা, কৌটিল্য বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্যের নীতিবাক্যগুলির সিংহভাগই তিক্তরসাশ্রিত। প্রায় প্রতিটি কথনেই উঠে এসেছে নিষেধ, প্রতিটি উপদেশেই সাবধানবাণী শোনানো হয়েছে। সে কথা অস্বীকার করা না গেলেও এটা মানতে হবে, ‘চাণক্য নীতি’ নামে পরিচিত এথিক্যাল কোড-এ বেশ কিছু ইতিবাচক বস্তুও বিদ্যমান। তার মধ্যে অন্যতম হল জীবনে সুখী হওয়ার জন্য প্রদত্ত চাণক্য-নির্দেশ। মহামতি চাণক্য নাকি সুখী জীবনের জন্য মাত্র চারটি সূত্রকেই পালনীয় বলে মনে করেছিলেন তাঁর উপদেশমালায়।
আমরা বড় বড় মেগাপোলিসে বাস করতে পারি, গ্ল্যামারস নিওন আলোর জগতে ভেসে যেতে পারি, স্কাইস্পারে বদলে যেতে পারে আকাশরেখা; বড় বড় মিডিয়া, কর্পোরেট হাউসের পাশেই কিন্তু আছে ধারাভির মতো বস্তি, ভয়াবহ দারিদ্র্য, গৃহহীন মানুষ, নানা সমস্যা, যা প্রতি মুহূর্তে নিওন আলোর ঢেউয়ে মুছে যাচ্ছে। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে, পরিবেশ ও ইকোলজি সমস্যা নিয়ে কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে যেভাবে ভেবেছিলেন, ইতিহাসে নারীদের যে একটা বিশিষ্ট স্থান দিয়েছিলেন, তা অবাক করে।
সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন যে, “দেহের সৌন্দর্যের চাইতে চিন্তার সৌন্দর্য অধিকতর মোহময় ও এর প্রভাব যাদুতুল্য।” অন্যদিকে চাণক্য ছিলেন দক্ষ পরিকল্পনাবিদ। সিদ্ধান্তে তিনি ছিলেন অটল এবং অর্থহীন আবেগের কোন মূল্য ছিল না তার কাছে। নিজস্ব পরিকল্পনা উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন কঠোর।
Regarding point #3 : Every one requires someone to share with when they just can’t take it on their own. And that does involve sharing some hardly kept secrets. So your point leaves us on a dilemma here. If a situation arises where one just cannot handle stuff single handedly, what should be done ??
Love the post. Need more post related to it.
Hi Minaoar, You can suggest us topic or surf the site, you may find it.
Welcome to this blog